শ্রেষ্ঠ উপন্যাস (দ্বিতীয় খণ্ড)

500.00৳ 


তারাশঙ্করের জন্ম বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে ১৩০৫ সালের ৭ই শ্রাবণ/খ্রি. ১৮৯৮-এর ২৩শে জুলাই। মৃত্যু ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের ২৭শে ভাদ্র/খ্রি. ১৯৭১-এর ১৪ই সেপ্টেম্বর। তিয়াত্তর বৎসর জীবনের দু-তৃতীয়াংশ কেটেছিল সাহিত্যসাধনায়। বত্রিশ বৎসর বয়সে নিজের ভবিতব্য ঘোষণা করেছিলেন : ‘সাহিত্যসেবার পথেই দেশের সেবা। বলতে পেরেছিলেন দেশের কাজে জেল খেটে আসার পরে, ১৯৩০ সালে। ভগ্নবিত্ত জমিদার বংশের সন্তান, কিন্তু অনাচার-আড়ম্বরে মজেন নি, দেশের সেবায় লেগেছিলেন প্রথম থেকেই—লোক-দেখানো কিংবা নিজের মন-ভজানো রাজনীতি করার ভিতর দিয়ে নয়; লিখেছেন : ‘মদ-গাঁজাটা খাই না—কিন্তু তারও চেয়ে কোন একটা তীব্রতর নেশায় মেতে থাকি, ঘুরে বেড়াই। বন্যাটা আমাদের দেশে হয় না এমন নয়, তবে কম। আগুন, ঝড় এবং কলেরা—এই তিনটিই আমাদের অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বিপদ। এরই মধ্যে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা ছিল। বিশেষ করে ১৯২৪/২৫ সালে আমাদের অঞ্চলে যে ব্যাপক মহামারীর আক্রমণ হয়েছিল তাতে আমি অন্তত আমাদের গ্রামের চারিপাশে ত্রিশ-চল্লিশখানি গ্রাম একাদিক্রমে ছ মাস ঘুরেছি, খেটেছি। এই সেবা আমার ব্যর্থ হয় নি। পাথরের দেবমূর্তি ভেদ করে দেবতার আবির্ভাবের কথা যেমন গল্পে আছে তেমনি ভাবেই এই পাপ-পুণ্যের রক্তমাংসের দেহধারী মানুষগুলির অন্তর থেকে সাক্ষাৎ দেবতাকে বেরিয়ে আসতে দেখেছি।’ অন্যত্র বলেছেন : ‘জীবনে যত মানুষ দেখলাম—মানুষই দেখেছি আমি, মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছি, দেখেছি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কখনো-না-কখনো এমনি এক-একটি বা এমনি কয়েকটি বিচিত্র বিকাশ হয়, যা মনে করিয়ে দেয়, বুঝিয়ে দেয় তারও মধ্যে আছে সুন্দর বা মধুরের একটি প্রবাহ; সে শুধুই বালুচর নয়, হঠাৎ একদিন বালুচর ভেদ করে উৎসারিত হয় মধুরের একটি নিঝর। প্রতিটি—প্রতিটি মানুষের মধ্যেই হয়।’ জীবনের কাছে পাঠ এভাবে সারা জীবনভর। নিয়েছিলেন তিনি। ফলে সমকালে বেঁচে থেকেও সমকালীনতার সঙ্গে শাশ্বত ধরা পড়েছিল তার দৃষ্টিতে।
গ্রামের সাহিত্যযশঃপ্রার্থী এক যুবক, তারাশঙ্কর, সেকালের দুর্ধর্ষ পত্রিকা কল্লোল’ বা ‘কালি-কলম’-এর হাত ধরে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন নি। এ-কথাটি মনে রাখা দরকার। যদিও খ্যাতির অবলম্বন কলকাতার ঐ সব পত্রিকা ছিল বটে। তিনি সেই তরুণ বয়সেই বুঝেছিলেন যে, প্রেমেন্দ্র-শৈলজানন্দদের পথ তার পথ নয়, অনেক দূর হয়তো যাওয়া যাবে একসঙ্গে, কিন্তু তার পরে নয়। তাই আধুনিকতা ও বাস্তবতা তিনি বুঝেছিলেন অন্যভাবে। মানুষী ক্ষুদ্রতা, দৈনন্দিন তুচ্ছতা ও মালিন্য, ব্যক্তিক নীচতা ও স্বার্থলোভ, সামাজিক বঞ্চনা ইত্যাদি নেতিই একমাত্র শেষ কথা হতে পারে না। জীবনে। প্রত্যয় জন্মেছিল : ‘জীবদেহ আশ্রয় করেই জীবনের বাস। কিন্তু সে তো তাকে অতিক্রম করার চেষ্টার মধ্যেই মানবধর্মকে খুঁজে পেয়েছে! সেইখানেই তো নিজেকে পশুর সঙ্গে পৃথক বলে জেনেছে। ইচ্ছে হল এমনি গল্প লিখব। সত্যিকারের রক্ত-মাংসের জীবদেহের ক্ষুধা আর তৃষ্ণা—তার কামনার ধারার সঙ্গে মিশেই চলেছে।
জীবন চলেছে একটি স্বতন্ত্র ধারায়। কোথাও জিতেছে, কোথাও হেরেছে।’ শুধু হারও নয়, শুধু জেতাও নয়, হার-জিতের খেলা নিয়ে যে-জীবন তার সমগ্রতা তিনি দেখতে চেয়েছেন, দেখাতে চেয়েছেন। সে-সাধনাই তাঁর শিল্পসাধনা। তাঁর কথাসাহিত্যে—গল্প-উপন্যাসে—যে জনজীবন, ব্যক্তিমানুষের মহত্ত্ব ও ক্ষুদ্রতা, মনুষ্যজীবন ও প্রকৃতির অন্যোন্যনির্ভরতা বিছিয়ে আছে তা এক মহাশিল্পীর সংসর্গে আমাদের নিয়ে যায়।
শিল্পস্রষ্টা ও জীবদ্রষ্টা তারাশঙ্করের বিশাল সৃষ্টিরাজ্যের প্রতিভূস্বরূপ কতিপয় রচনা পাঠকদের উদ্দেশে নিবেদন করা হল এ-গ্রন্থে।

3 in stock

SKU: Abosar Prokashana Sangstha_332 Categories: ,

Book Details

Weight0.975 kg
Publisher

Abosor অবসর

Reviews

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.