অপরূপ রূপকথা

90.00৳ 


শহর ছাড়িয়ে যেখানে পাড়াগা, সেখানে সবই সুন্দর, কেননা সেখানে শরৎ এসেছে, যদিও কখন এসেছে কেউ জানে না। মাঠভরা সবুজ ঘাস, খেতভরা হলদে ধান; আর মাঠের ফাকে ফাকে খড়ের গাদা উঁচু করা, আর সারসপাখি তার লম্বা লাল পা ফেলে-ফেলে বেড়াচ্ছে, আর আরবিতে বকর-কর করছে, যেহেতু তার মা আর কোনো ভাষা তাকে শেখায় নি। মাঠের চারদিকে মস্ত ঘন বন, আর সেই বনে মস্ত-মস্ত গভীর হ্রদ। সত্যি, সবই সুন্দর। আকাশ-ভরা রোদ, আর সেই রোদে একটা ভাঙা ছাড়া বাড়ি, বাড়িটার চারদিকে সরু-সরু খাল। জায়গাটার জংলা চেহারা, বনের মতোই। আর সেখানে-সেখানে বসে আছে একটা পাতিহাঁস।
কেন বসে আছে? তার ডিমের তা দিতে হচ্ছে যে! বাচ্চাগুলো ফুটতে বড়ো দেরি করছে, তার বিরক্ত লেগে উঠছিল। এ পোড়া জায়গায় কথা বলবার একটা লোকও নেই। অন্য হাঁসেরা মনের ফুর্তিতে খালে-খালে গুরে বেড়াচ্ছে, কার অত গরজ তার সঙ্গে দুদণ্ড বসে কথা বলবে!
শেষটায় ডিমগুলো এক এক করে ফুটতে লাগল। পিপি, পি-পিপি! ডিমের খোলশ ভেঙে ছোট্ট বাচ্চারা মাথা বার করে দিয়েছে। ‘প্যাক! প্যাক!
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল তারা, সবুজ পাতার নিচে চারদিকের যতটা পারলে দেখে নিলে। বললে, ‘প্যাক! প্যাক! ওদের মা বললে, “দ্যাখ, দ্যাখ। ওরা যতটা পারে দেখে নিক, সবুজ রং চোখের পক্ষে ভালো।
‘বাপরে, কী মস্ত পৃথিবী!’ ছোটো বাচ্চারা বলে উঠল। কেননা ডিমের মধ্যে যতটা জায়গা তাদের ছিল এখন তার চেয়ে ঢের বেশি নিশ্চয়ই।
‘সর্বনাশ! তাদের মা বললে, “তোরা বুঝি ভেবেছিস এইটুকুই সমস্তটা পৃথিবী? এই খেত পেরিয়ে, ঐ মাঠ ছাড়িয়ে এক্কেবারে ও-ই ধূ-ধূ বাগান পর্যন্ত যে! সে পর্যন্ত আমিই কখনো যাই নি। তোরা সবাই ঠিকঠাক আছিস তো?’ বলে হাঁসটা উঠে দাড়াল। সর্বনাশ!’ (হসটার কথায় কথায় ‘সর্বনাশ’ বলবার অভ্যেস ছিল) এখনো এই মস্ত বেঢপ ডিমটা তো ফোটে নি! কী জ্বালা—এটা আর কতক্ষণ টিকবে! আর তো পারিনে—’ বলতে বলতে সে সেই মস্ত বেঢপ ডিমটার উপর ফের বসে পড়ল। ‘কী গো, কী খবর?
বুড়ি হাঁসটা বেড়াতে এসেছে। বুড়ি বড়ো ভালো, ঘুরে-ঘুরে পাড়া-পড়শিদের খোঁজ-খবর নিয়ে যায়।
‘কী আর বলব—যা মুশকিলে পড়েছি এই একটা ডিম নিয়ে! কিছুতেই ও ফুটবে না! এই এদের একবার দেখুন না বাছারা আমার ফুটফুট করছে। অবিকল ওদের বাপের মতো হয়েছে—তা ও-হতভাগা তো একবার দেখতেও আসে না আমাকে।’

3 in stock

SKU: Abosar Prokashana Sangstha_438 Categories: ,

Book Details

Weight0.2 kg
Publisher

Abosor অবসর