Book Details
Weight | 1.1 kg |
---|---|
Publisher |
Abosor অবসর |
550.00৳
লেখালেখির অভ্যাস থাকলেই কি লোকে লেখক হয়? তা হলে লেখাপড়া-জানা বাঙালি সবাই লেখক হয়ে যেত, কারণ অক্ষরজ্ঞান আছে অথচ কবি-সাহিত্যিক হতে চায় না এমন বঙ্গসন্তান বিরল। লেখার অভ্যাস শুধু নয়, সেই সঙ্গে প্রতিভাও থাকা চাই। বিভূতিই কি ভেবেছিলেন যে তিনি লেখক হবেন। ভাবেন নি। লেখালেখির অভ্যাস কিন্তু ছিল। সাহিত্যসৃজন বা সুখ্যাতির কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষায় নয়, বাণীসাধনা ছিল তাঁর রক্তে। পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শাস্ত্রীর নিকট হতে পাওয়া রক্তের ঋণ। বিভূতিভূষণ ডায়রি লিখতেন, অভ্যাসটি বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। সে-সব রচনায় বাস্তবের ঘটনা ও কল্পনার সত্য জড়াজড়ি করে থাকত। হয়তো সেসব লেখার ভেতরে উঁকি দিত কাহিনীর আদল, বাঁধা পড়ত সত্যিকারের কোনো অবিশ্বাস্য চরিত্র। এ-সবের বেশি কিছু নয়।
সাহিত্যিক হওয়া বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এক রকম আকস্মিকই বলা চলে। কলকাতার অদূরে সোনারপুর-হরিনাভিতে তখন তিনি একটা স্কুলের মাষ্টার। বয়ঃকনিষ্ঠ এক ভক্ত জুটেছিল সেখানে, তার নাম পাঁচুগোপাল। সে-ই হঠাৎ আবিষ্কার করে তার বিভূতি দাদার লেখার বাতিক। বলে হয় না, তাগাদা দিয়ে হয় না, সাহিত্য রচনার ধারে-কাছে নেই বিভূতি মাষ্টার।। তারপর-হঠাৎ একদিন হরিনাভি ও তার আশপাশের দু-পাঁচটা পাড়াগাঁয় দেখা গেল যেখানে-সেখানে পোস্টার একটা : । । কাজটা পাঁচুর কিন্তু জবাবদিহি করতে হচ্ছে মাষ্টার মশাইকে। কই ‘চঞ্চলা’? কোথায় ‘চঞ্চলা? সবাই দেখতে চায়। সে-এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড! ‘চঞ্চলা’র যে অস্তিত্বই নেই এ কথা বললেই-বা বিশ্বাস করে কে?
অতএব লেখার জন্য কলম ধরতেই হল। গল্প লেখা হল, ‘উপেক্ষিতা’। ছাপা হল ‘প্রবাসী’তে—সেকালের মহাবিখ্যাত মাসিক, রবীন্দ্রনাথেরও লেখা যেখানে বেরোয়। শুধু ছাপানোই নয়, মনি-অর্ডারে করে সম্মানী এল দশ টাকা। এই শুরু। ঘটনাটি ১৯২২ সালের। পরবর্তী আটাশ বছর অপ্রতিহত জয়যাত্রা। সাত বছর পরে বেরুল প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ এবং তাতেই বিশ্বজয়।
ছাপ্পান্ন বছরের (১৮৯৪-১৯৫০) আয়ুষ্কালে প্রকাশিত রচনার সংখ্যা তার কম নয়। মৃত্যুর পর অনেক রচনা বেরলেও তার উল্লেখযোগ্য সমস্ত রচনাই জীবৎকালে বেরিয়েছিল এবং সে-সবের মধ্যে এই পাঁচটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাসও অন্তর্ভুক্ত। অত্যন্ত পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ও সাহসী লেখক ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যবিত্তের সংসারে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে পেশা হিসেবে সাহিত্যব্রত গ্রহণ করেছিলেন এবং সিদ্ধকাম হয়েছিলেন-এ তথ্য সরল, আদর্শিক, উদাসীন, শান্তস্বভাব ও পরিব্রাজক এ মানুষটির চরিত্রের ভিন্নতর পৌরুষমহিমা আমাদের সামনে তুলে ধরে।
“আমি এটা বিশ্বাস করি যে মানুষের আয়ু দ্বারা মানুষের বৃহত্তর জীবন মাপা যায় না, এ একটা বিরাট বৃত্ত, হাজার হাজার বছর এর পরিধি। তুমি নেই, আমি নেই। আছে তোমার আত্মা, আমার আত্মা-লক্ষ বছর আগেও তাদের স্থিতিকাল। সে বিরাট vision দিয়ে জীবনকে যে দেখচে, জীবনকে সত্যিকার সে-ই চিনেচে।”–একটা চিঠিতে কথাগুলো লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে লেখা চিঠি ভাবী-পত্নী রমা, ওরফে কল্যাণী চট্টোপাধ্যায়কে।
এই ভিশন বস্তুতপক্ষে কসমিক ভিশন, যে-দৃষ্টিতে মহাজাগতিক করুণার ছায়াপাত খেলা করে। বিভূতিভূষণ এই জীবনদৃষ্টির কবি। শুধু বাণীশিল্প সৃজনের ক্ষেত্রেই নয়, নিজের জীবন রচনার ক্ষেত্রেও। তাঁর প্রধান ও মহৎ উপন্যাসগুলোর কেন্দ্রভূমি তাই শুধু ব্যক্তিমানুষ কিংবা মানুষের তৈরী কোনো সমাজকে নিয়ে দানা বাঁধে না, সেই সঙ্গে ওতপ্রোত মিশে থাকে প্রকৃতিচরাচর ও ইতিহাসগতি।
Weight | 1.1 kg |
---|---|
Publisher |
Abosor অবসর |
Reviews
There are no reviews yet.
Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.