সচেতনভাবে বস্তুবাদের আদর্শ অবলম্বন করে নয়, বাস্তবতাই মধ্যবিত্তের জীবনে ও চেতনায় ভাববাদ ও বস্তুবাদের যে সংঘাত সৃষ্টি করেছিল, যে সংঘাত আমার জীবনে ও চেতনায় প্রকট হয়েছিল, সাহিত্যে তারই স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি হিসাবে দেখা দিয়েছিল এই বিদ্রোহ।
শৈশব থেকে সারা বাংলার গ্রামে শহরে ঘুরে যে জীবন দেখেছি, নিজের জীবনের বিরোধ ও সংঘাতের কঠোর চাপে ভাবালুতার আবরণ ছিড়ে ছিড়ে জীবনের যে কঠোর নগ্ন বাস্তব রূপ দেখেছি-সাহিত্যে কি তা আসবে না? এই বাস্তব জীবন যাদের—সেই সাধারণ বাস্তব মানুষ?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থে সাধারণ বাস্তব মানুষের বাস্তব জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। মার্কসীয় জীবনদর্শন তার জীবনে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল তারই ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবিতে মার্কসীয় জীবনবীক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য, মুদ্রাস্ফীতি, বস্ত্র-সংকট, নারী-ব্যবসা ইত্যাদি কারণে বাংলার সমাজজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছিল। মানুষের সনাতন মূল্যবোধগুলো বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রামের মেয়ে বউরা শহরে গিয়ে দেহ বিক্রি করে। সতীত্বের চেয়ে দরিদ্র মানুষগুলোর ভেতর বেঁচে থাকাই বড় | হয়ে দেখা দিয়েছিল। আজ কাল পরশুর গল্প’ গ্রন্থে দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে চোরাকারবারি, কালোবাজারি, নারী ব্যবসায়ী—এদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষের জীবনের করুণ পরিণতি ফুটে উঠেছে।
এই গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প—আজ কাল পরশুর গল্প। এই গল্পে দেখা যায় মানসুকিয়া গ্রামের দরিদ্র রামপদ অর্থ আর খাদ্যের সন্ধানে গ্রাম ত্যাগ করেছিল। স্বামীর অনুপস্থিতিতে রামপদর স্ত্রী মুক্তার দেহভোগের জন্য খাদ্যের প্রলোভন দেখায় গ্রামের মোড়ল ও চালের কারবারি ঘনশ্যাম দাস।
Reviews
There are no reviews yet.
Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.