পঞ্চ-গীতিকবির গান

350.00৳ 


নব নব সৃষ্টি সুখের উল্লাসে রচিত এই গান অন্তত বাঙালি মধ্যবিত্ত মানসে তো বটেই, ভিন্নভাষীদের কাছেও ক্রমশ আদৃত ও আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। এর অন্তর্নিহিত শক্তি কী? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই যে কথাটি মনে জাগে সেটি হল কথা ও সুরের সম্মিলন। সুরের সঙ্গে কথার যুগল-সম্মিলনে জেগে উঠেছে গান। সুরের আবেদন সর্বজনীন হলেও বাংলা গানের ক্ষেত্রে কথার গুরুত্ব অপরিসীম। পঞ্চকবির গানে এর সার্থক রূপায়ণ দেখি।
জর্মন লীডরের চেয়ে রবীন্দ্রনাথের গান অধিকতর মানসম্পন্ন বলে মনে করতেন সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। লীডর রচনা করেছেন গ্যেয়েটের মতো কবি আর সুর দিয়েছেন বেথোফনের মতো সুরস্রষ্টা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং গীতিকার ও সুরকার তার গানের। সুতরাং কথা ও সুরের সমন্বয়ে মিলেমিশে এক সুসংহত রূপ নিয়েছে তার গান। সমকালে ও পরবর্তীকালে গীতিকবি সুরকাররাও এই পথেই গীত রচনা করেছেন। বিষয়বৈচিত্র্য ও সুরবৈচিত্রে বাংলা গানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তথাপি এই পঞ্চ-সংগীতকারদের গানে স্বাতন্ত্র ও স্বকীয় মহিমার উজ্জ্বল স্বাক্ষর মেলে। বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না কোটি রবীন্দ্রসংগীত, কোন্‌টি দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্ত-অতুলপ্রসাদী আর কোন্‌টি নজরুলসংগীত। আধুনিক বাংলা গানের রূপ নির্মাণে, কথা ও সুরের যুগলমিলনে এবং সর্বোপরি পরিমিতিবোধের অমৃত পরশে সাজিয়ে তুলেছেন গানের ডালি।
কালানুসরণের দিক দিয়ে বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথের পরই স্মরণ করতে পারি গীতিকার-সুরকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাম। সমকালে ডি এল রায়ের গান নামে পরিচিত ও সমধিক জননন্দিত তার রচিত নাটকের গান। নানাভাবে গীত রচনা করলেও সমকালীন পেশাদারী মঞ্চের প্রয়োজনে বেশ গরিষ্ঠসংখ্যায় গান রচনা করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল। তবে, কেবল নাটকের জন্যেই গীত রচনা করেছেন এমন নয়। দেশাত্মবোধক, প্রেম-প্রকৃতি এবং হাসির গান রচনায়ও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মঞ্চনাটকের জন্য গান রচনা করলেও স্বতন্ত্রভাবে তার গান গীতি আবেদন জাগিয়ে তোলে। আধুনিক গানের ধারাবাহিকতায় আত্মপ্রকাশের নতুন স্বর ও সৃজনের সামর্থ্য দেখিয়েছেন রবীন্দ্র সমকালীন গীতিকবিরা। এই প্রসঙ্গে সংগীতবিদ সুধীর চক্রবর্তীর একটি মূল্যবান বক্তব্য স্মরণযোগ্য :
‘দ্বিজেন্দ্রলালের গানের পৌরুষ এবং হাসির গানের সিদ্ধি রজনীকান্তের অকপট ভক্তিরস ও আত্মদীনতার উচ্চারণ আর অতুলপ্রসাদের সংবৃত আত্মবেদনার তাপ বাংলা গানে নতুন ভাবলাবণ্য সংযোজন করে নিঃসন্দেহে। এদের গানের রূপবন্ধ ও গায়নরীতি যে রবীন্দ্রসংগীত থেকে বেশ পৃথক এবং সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত এই তথ্যে রয়ে যায় ব্যক্তিত্বের প্রবলতা। রবীন্দ্রনাথের সঞ্চারী এঁরা নেন নি এবং সুরবিহারের স্বাধীনতা গায়নে মেনে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিপ্রতীপ পথেই বরং গেছেন সাহস ভরে।
(পৃষ্ঠা-২৩, আধুনিক বাংলা গান, সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত, ১৩৯৪) কথাগুলি প্রণিধানযোগ্য। রবীন্দ্রসমকালীন এই চার জন গীতিকবির গানই স্বাতন্ত্রে উজ্জ্বল।
অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিসরে মফস্বলে বসবাস করে গীত রচনা করেছেন রজনীকান্ত সেন, ‘কান্তগীতি’ নামে যার গান সমধিক পরিচিত। পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে, স্বাজাত্যপ্রীতি-জাতীয়তাবাদের প্রতি প্রীতিবোধের-মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে রজনীকান্তের রচনায়। কান্তকবির অপর একটি বিষয় সবিশেষ উল্লেখ্য সেটি হল-ভক্তিরসের আবেদন ও সষ্টার প্রতি আত্মনিবেদন। সেইসঙ্গে স্মরণীয় অতুলপ্রসাদের গান। অতুলপ্রসাদ সেন প্রধানত প্রবাসে থেকেই গীত রচনা করেছেন।

3 in stock

SKU: Abosar Prokashana Sangstha_370 Categories: ,

Book Details

Weight0.648 kg
Publisher

Abosor অবসর

Reviews

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.